ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

এরশাদের টাকা চুরি, সন্দেহের তীর স্টাফদের দিকে

এরশাদের টাকা চুরি, সন্দেহের তীর স্টাফদের দিকে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বনানী কার্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনার আসল হোতা কেউ ধরা পড়েনি। সন্দেহভাজন তিন কর্মচারিকে আটক করা হলেও চুরির টাকা উদ্ধার হয়নি এখনো। এ নিয়ে মামলাও হয়নি। তবে এ ঘটনায় এরশাদের স্টাফদেরকেই সন্দেহ করা হচ্ছে।

অফিসে নিয়মিত আসা যাওয়া করে এমন অনেকেই বলেছেন, অফিসের স্টাফ ছাড়া একাজ সহজে বাইরের কেউ করতে পারে না। অসুস্থ এরশাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে যে পরিচিত যে কেউ একাজ করতে পারে বলে নেতাকর্মীরা সন্দেহ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনানী অফিসের এক কর্মচারি বলেন, চুরির ঘটনাটি রহস্যজনক। পার্টির নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকা সত্বেও এত টাকা অফিসে থাকার কথা নয়। সিন্দুকে এত টাকা আছে সেটা জানলো কি করে? চুরির ঘটনায় আমাদের অবশ্যই কেউ জড়িত। তা না হলে এরশাদের অফিসে চুরি করার সাহস কারো আছে বলে মনে হয় না।

এদিকে ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা বনানী কার্যালয় পরিদর্শন করেছে এবং চুরির বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। ঘটনার পর থেকে এরশাদের বনানী অফিস পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে।

এরশাদের বনানী অফিসে চুরির ঘটনা তদন্তে বনানী থানা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে এরশাদের অফিসের দারোয়ান ওয়াহিদ, ফেরদৌস ও অফিসের কম্পিউটার অপারেটর রিপনকে আটক করেছে। তাদের বনানী থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির নেতারা চুরির ঘটনাকে রহস্যজনক বলছে। তবে ঘটনায় কারা জড়িত তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

এরশাদের ব্যক্তিগত সচিব মেজর অব. খালেদ আখতার বলেন, চুরি করে কেউ পার পাবে না। যেই করুক বা যারাই জড়িত থাকুক দুই একদিনের মধ্যে ধরা পড়বে।

সোমবার ভোররাতে দুবৃত্তরা এরশাদের বনানী অফিসে এরশাদের ব্যক্তিগত স্টাফ জাহাঙ্গিরের সিন্দুকের তালা ভেঙ্গে ৪৩ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। পাশাপাশি এরশাদের ব্যাক্তিগত সচিব মেজর অব. খালেদ আখতার ও মহাসচিবের রুমের তালাও ভেঙ্গে ফেলে দুর্বৃত্তরা।

মঙ্গলবার ভোরে এরশাদের স্টাফরা বনানী কার্যালয়ে এসে তালা ভাঙা দেখতে পেলে পুলিশে খবর দেয়। পরে বনানী থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে। একপর্যায়ে দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ঘটনাস্থলে আসে। বনানী অফিসের ভিতরে সিআইডির টিম অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঘটনার বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে তারা। এসময় মিডিয়াকর্মী ও পার্টির কোনো নেতাকর্মীকে সিআইডি পুলিশ অফিসের ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। বর্তমানে কার্যালয়টিতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বনানী থানার এসআই মোকলেস বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কার্যালয়ের মেইন গেটের ভেতরে ঢোকার পর ছোট্ট তিনটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কক্ষের লক ভাঙা পেয়েছি আমরা। কক্ষের আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না, এমনকি পুরো ভবনে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই।

তিনি বলেন, কার্যালয়ের লোকজন দাবি করছে, একটি কক্ষ থেকে ৪২ লাখ টাকা এবং আরেকটি থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো খোয়া গেছে। তবে তারা এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিতভাবে অভিযোগ করেনি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পক্ষ থেকে এখনো লিখিতভাবে চুরির বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ দেননি।

চুরির ঘটনার পর বনানী অফিস পরিদর্শনে আসেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাপা অফিসে টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। কে করেছে এখনি বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর বলা যাবে কে চোর। পুলিশের তদন্তের পর বলা যাবে আসলে কে চুরির সঙ্গে জড়িত। চুরি হওয়া টাকা ছিল রংপুরে এরশাদের বাড়ি কাজের জন্য এবং ষ্টাফদের বেতনের টাকা, অফিস ভাড়া মিলিয়ে ৪৩ টাকা লক্ষ টাকা ছিল। ভবনের নিরাপত্তার জন্য ২ জন নিরাপত্তা প্রহরী ছিল তার পরেও তালা ভেঙ্গে এই টাকা চুরি হয় বলে জানান মহাসচিব।

মামলা করেছেন কিনা জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, মামলা এখনো করিনি তবে তদন্ত শেষ হলে অফিসের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার স্বাক্ষর জাল ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় এর আগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাখেন। এরমধ্যেই তার বনানী অফিসে চুরির ঘটনা ঘটে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত