ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

৯১ বছর বয়সেও শিক্ষকতা করছেন এই নারী

৯১ বছর বয়সেও শিক্ষকতা করছেন এই নারী

বুড়িয়ে গেলেও যে মানুষ ফুরিয়ে যায় না তার জলন্ত উদাহরণ যেন লাছমি সুন্দরাম। তিনি একজন শিক্ষক। আর তার বয়স বর্তমানে ৯১ বছর। এই বয়সে বেশিরভাগ নারী পুরুষই বয়সের ভারে নুয়ে পড়েন। অথচ এই নারী এখনও কর্মক্ষম। সকালে উঠে নাস্তাপানি খেয়েই শাড়ি পড়ে রেডি হন। তারপর হাতের লাঠিতে ভর দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। আস্তে আস্তে চলতে চলতে দিব্যি পৌঁছে যান বাচ্চাদের স্কুলে

গত ২৪ বছর ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন লাছমি সুন্দরাম। তিনি এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন ৬৭ বছর বয়সে, যখন বেশিরভাগ মানুষ অবসরে চলে যায়। এত বেশি বয়সে এরকম একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘কোনোদিন আমাকে কাজ করতে হয়নি। তাই ৬৭ বছর বয়সে এসেও আমার মধ্যে অনেক শক্তি জমা ছিল।’

৬৭ বছর বয়সে মারা যান লাছমি সুন্দরামের স্বামী। এরপর ভয়াবহ নিঃসঙ্গতায় ভুগতে থাকেন। একা একা বাড়িতে বসে সময়গুলো যেন ভারী পাথরের মতো তার ওপর চেপে বসেছিলো। তাই একাকিত্ব কাটিয়ে মানুষের সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তার ভাষায়, ‘তখন আমি শুধু চেয়েছিলাম ঘর থেকে বেরুতে এবং মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে।’

অথচ এই বয়সে বেশিরভাগ মানুষ অবসরে যায়। আর লাছমি কিনা কাজে যোগ দেয়ার জন্য সেই সময়টাকেই বেছে নিলেন। তিনি শিক্ষকতায় যোগ দিলেন। ব্যাঙ্গালোরের যেসব শিশুদের বিশেষ সাহায্যের প্রয়োজন আছে এমন শিশুদের লেখাপাড়া শেখানোর কাজে যুক্ত হলেন লাছমি।

যদিও লাছমির জীবনের উদ্দেশ্য ছিলো চিকিৎসক হয়ে লোকজনের সেবা করা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,‘জীবনের শুরুতে আমার ছিলো অনেক উচ্চকাঙ্খা। আমি ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসা করতে চেয়েছিলাম।’

কিন্তু সময়টা তার অনুকুলে ছিলো না। তাই তো বিয়েশাদি করে ঘরেই বসেই কাটিয়েছিলেন জীবনের মূল্যবান সময়টুকু। কিন্তু ষাটোর্ধ্ব বয়সে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যুক্ত হওয়ার কারণে সেই স্বপ্নের কিছুটা অন্তত পূরণ হয়েছে। লক্ষীর ভাষায়, ‘ওই জমানায় নারীদের অধিকার ছিল সীমাবদ্ধ। কিন্তু দেখুন, এখন এই বয়সে এসে আমার স্বপ্নের অর্ধেকটা পূরণ হলো। যেসব শিশুর কোনো উপায় নেই, তাদের সাহায্য করছি, এটা কি সন্তুষ্ট হওয়ার মতো ব্যাপার না?’

এটা আসলেই অনেক বড় ব্যাপার। নইলে যখন একজন মানুষ বয়সের ভারে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন সেই বয়সেই কিনা লাছমি ছুটে বেড়াচ্ছেন। ছোট ছোট প্রতিবন্ধী শিশুদের বড় হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এই বৃদ্ধ। আর নিজের এই কাজে দারুণ খুশি লাছমি।

এখন নারীরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতেও খুব খুশি লাছমি । কেননা নারীরা তো এখন অনেক স্বাধীন। তারা নিজেদের জীবন সম্পর্কে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিষয়গুলো তাকে আনন্দ দেয়।

লাছমির বাড়িতে কোনো ছেলে নেই। এ নিয়েও কোনো আফসোস নেই তার। লাছমির ভাষায়, ‘আমার বাড়িতে কোনো ওয়াই ক্রোমোজোম নেই। আমার তিন মেয়ে, পাঁচ নাতনি আর দুইজন প্রপৌত্রী।’এই কথাটি বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেন লক্ষী।

এখানই কিন্তু থামতে চান না লক্ষী। আরো অনেকদিন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান। আসলে তিনি এই শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান আমৃত্যু। তাই ভবিষ্যৎ নিয়েও কোনো উদ্বেগ নাই তার। তার ভাষায়, ‘ভগবান আমার জন্য কী রেখেছেন, সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।’

প্রতি রাতে লাছমি কি প্রার্থনা করেন জানেন? তিনি প্রার্থনা করেন, ‘হে ভগবান, কাল সকালটা যেন দেখতে না হয়। কিন্তু পরদিন সকালে উঠে আমি কফি তৈরি করি।’

সবমিলিয়ে নিজের জীবনা নিয়ে খুব সুখী লাছমি। এসম্পর্কে তার দর্শন- ‘এটাই জীবন। সৃষ্টিকর্তার চাওয়াই এখানে সব। সেজন্যই আমি এই জীবনটা নিয়ে খুব সুখী।’

বিবিসি অবলম্বনে মাহমুদা আকতার

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত