ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

সালথার ঘটনায় আটক ৩, মামলা প্রক্রিয়াধীন

  হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৪১

সালথার ঘটনায় আটক ৩, মামলা প্রক্রিয়াধীন
সালথায় তাণ্ডবের চিত্র

ফরিদপুরের সালথায় হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পর গভীর রাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় এক মাদ্রাসাছাত্র প্রাণ হারিয়েছেন। আটক করা হয়েছে ৩ জনকে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান জানিয়েছেন, হামলার সময় র‍্যাব ও পুলিশের ৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সিআইডির ক্রাইম টিম কাজ শুরু করেছে। এছাড়া হামলার ঘটনায় অংশ নিয়েও অনেকে গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন যাদের পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে ৩ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর তাণ্ডবের পর মঙ্গলবার সালথা উপজেলা সদরে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ভবনের সরকারি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে উপজেলা ত্রাণের গুদাম ও কৃষি অফিস।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনেও ভাঙচুর করা হয়েছে। দুটি বিলাসবহুল সরকারি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সাতটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। দুটি মোটরসাইকেল হামলাকারীরা নিয়েও গেছে বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন: আগুন-হামলা পরিকল্পিত: সালথার ইউএনও

অন্যদিকে হামলার সময় নিহত মাদ্রাসাছাত্রের নাম হাফেজ মো. জুবায়ের হোসেন (২২)। তিনি সালথার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের আশরাফ আলী মোল্যার বড় ছেলে। মাদারীপুর জেলার শিবচরের একটি মাদ্রাসা থেকে হেফজ সম্পন্ন করে জুবায়ের সেখানে চার জামাতে পড়াশুনা করছে। তারা তিন ভাই ও এক বোন।

স্থানীয়রা জানান, আশরাফ আলী মোল্যা ক্ষেতে কৃষি কাজ ও মাদ্রাসা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। গতকাল রাতে জুবায়েরের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার সকালে বাড়ির প্রাঙ্গণে হাফেজ জুবায়েরের জানাজা শেষ হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের থানা কার্যালয়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, এসিল্যান্ডের অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও সরকারি বাসভবন, উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বাসভবনে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ইউএনওর কার্যালয় ভবনে অবস্থিত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা হয়েছে বেশি।

আরও পড়ুন: সালথার ঘটনায় নিহত এক, থমথমে অবস্থা

এছাড়া পুরো ভবনের নিচতলার অধিকাংশে দরজা জানালা ও আসবাব ভাঙচুর করা হয়েছে। কাগজপত্র ও মালামাল তছনছ করা হয়েছে। এসিল্যান্ড অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বিনষ্ট হয়েছে। পাশের মুক্তযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে পল্লীবিদুৎ সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ের জানালা ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলার শিকার এসব স্থানে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। সদরের দোকানপাট অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে এ হামলার সাথে জড়িত কতজন আহত হয়েছেন তা নিদিষ্ট করে জানা যায়নি।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মঙ্গলবার সকালে সালথা থানা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, পুরো ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করেছি। যেই ধ্বংসযজ্ঞ তারা চালিয়েছে, সেসব আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম টিম। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধরার চেষ্টায় অভিযান চলমান রয়েছে। হামলায় পুলিশ ও র‍্যাবের ৮ জন আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষে জড়িতদের মধ্যে একজন মারা গেছে এবং চারজন আহত হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনার পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরণের গুজব প্রচার করা হয়েছে। হামলার সময় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক এবং পলিটিক্যাল মতাদর্শের লোক জড়ো হয়। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে পর্যাপ্ত সংখ্যক গুলিবর্ষণ করতে হয়েছে। থানা পুলিশ ৫৫২ রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার সেল ব্যবহার করেছি। লেট বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বোপরি আমরা শেষ মুহূর্তে চাই না, ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার জানান, সম্প্রতি তিনি করোনা আক্রান্ত। ঘটনার সময় তিনি সরকারি বাসভবনে ছিলেন না।

তিনি বলেন, ফেসবুকে ও স্থানীয় বিভিন্ন লোকজন গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, পুলিশ এবং প্রশাসন ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা (প্রশাসন) একজন হুজুরকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে তারা উপজেলা অফিসের দিকে আসতে থাকে।

ইউএনও আরও বলেন, ঘটনাটি জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানালে ফরিদপুর ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে পুলিশ ফোর্স আসে। কিন্তু উত্তেজিত জনতার সংখ্যা এতো বেশি ছিলো যে, এই স্বল্পসংখ্যক ফোর্স দিয়ে তাদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে তারা উপজেলা অফিস চত্বরে প্রবেশ করে উপজেলা কৃষি অফিসের সমস্ত কিছু ভাঙচুর করে। আমাদের ল্যাপটপ চুরি করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যে গোডাউন রয়েছে, সেটিও তারা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, হামলাকারীরা আমার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হলে আমার নিরাপত্তায় থাকা আনসার গুলি করে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা তাদের উপেক্ষা করে হামলা করে। বাসায় আমার পরিবার ছিলো। তারা অতর্কিতভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় আমার বাসভবনে হামলা চালায়। গ্যারেজে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের সরকরি গাড়ি ছিলো, সেগুলো জ্বালিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এক পর্যায়ে তারা বাসভবনের সমস্ত কিছু ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে, ফুকরা বাজার ও সালথার স্থানীয়দের মাঝে এ ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব সম্পত্তি জনগণের টাকায়, এমন কথাও বলছেন তারা। পাশাপাশি সরকারি দু’জন কর্মকর্তা জনগণের সাথে জনবান্ধব আচরণ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত