ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিল্পপতির উদ্দ্যোগে বেতন পাচ্ছেন ৪৩৩ শিক্ষক-কর্মচারী

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:২৪  
আপডেট :
 ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৮

শিল্পপতির উদ্দ্যোগে বেতন পাচ্ছেন ৪৩৩ শিক্ষক-কর্মচারী

যশোরের চৌগাছায় এক শিল্পপতির উদ্দোগে বেতন পাচ্ছেন ২৮টি নন-এমপিও স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার ৩০৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী। এছাড়াও ১০৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৫ জন শিক্ষককে বেতন দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন ডিভাইন গ্রুপ নামের এই শিল্পপতির প্রতিষ্ঠানটি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই একশত পচিশজন শিক্ষকের ৪৫ জনকে চার হাজার টাকা করে, ৪২ জনকে চার হাজার পাঁচশত টাকা করে এবং ৩৯ জনকে পাঁচ হাজার পাঁচশত টাকা করে বেতন ছাড়াও ৪০ টাকা করে টিফিন ফি দেয়া হয়। এসকল শিক্ষকরা সরকারী শিক্ষকদের সহায়ক শিক্ষক হিসেবে পাঠদানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় ‘হোম ভিজিট’ পরিচালনা করেন। যার মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের তথ্য নিয়ে তাদের শিক্ষা উপকরণ (বাংলা, ইংরেজি, অংকা খাতা ও সাদা কাগজ) দেয়া হয়। প্রতি বছর দুই কিস্তিতে স্কুল প্রতি পাঁচ হাজার পাঁচশত টাকার শিক্ষা উপকরণ এই ১০৫টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। চলতি বছরে স্কুলগুলির ১৮ হাজার ৭১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ কিস্তিতে ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৮০ টাকার শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: এমপিওভুক্তি : পরিকল্পনায় আছে বরাদ্দ নেই

২০১৪ সাল থেকে উপজেলার ননএমপিও ৬টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে সম্মানী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ডিভাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসানুজ্জামান রাহীন। উপজেলার পাশাপোল আম-জামতলা মডেল কলেজের ৩২, জেসিবি আদর্শ কলেজের ২১, হাকিমপুর মহিলা কলেজের ২২, জেএমএসকে কলেজের ১৮, এসএম হাবিবুর রহমান পৌর কলেজের ২৬ ও তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন দিচ্ছে ডিভাইন গ্রুপ। এসব কলেজের অধ্যক্ষদের সাড়ে ছয় হাজার, প্রভাষকদের সাড়ে পাঁচ হাজার, অফিস সহকারীদের চার হাজার ও অফিস সহায়কদের (পিওন) দু’ হাজার পাচশত টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়।

২০১৫ সাল থেকে উপজেলার ননএমপিও ২২টি স্কুল মাদ্রাসার সকল পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডিভাইন এডুকেশনের আওতায় বেতন দেয়া হচ্ছে। স্কুল-মাদ্রাসাগুলো হলো হাউলী-বাড়িয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পৌর আইপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঝিনাইকুণ্ডু-সাদীপুর বালিকা বিদ্যালয়, খড়িঞ্চা বালিকা বিদ্যালয়, হিজলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিপিআরএন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খলশী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমটিভি বালিকা বিদ্যালয়, বিকেএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাতিবিলা নিয়ামতপুর তাহযীবুল উম্মাহ দাখিল মাদ্রাসা, মাকাপুর দাখিল মাদ্রাসা, বর্ণি দাখিল মাদ্রাসা, শাহাজাদপুর দাখিল মাদ্রাসা, জেটিকেইউ দাখিল মাদ্রাসা ও কাবিলপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা। এছাড়া এমপিওভূক্ত স্বরুদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪, আরসিএমটিইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪, বর্ণি রামকৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩, উজিরপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩, মাকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩, ঝাউতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ এবং এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ জন মাধ্যমিক শাখার ননএমপিও শিক্ষককে বেতন দিচ্ছে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি।

আরো পড়ুন: এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া

এসব স্কুলের প্রধান শিক্ষক/সুপারদের চার হাজার, সহকারী শিক্ষকদের তিন হাজার, অফিস সহকারীদের দু’হাজার পাঁচশত এবং অফিস সহায়কদের (পিওন) ১ হাজার পাঁচশত টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়। এসকল শিক্ষকদের একমাসের বেতনের সমপরিমাণে বছরে দু’টি উৎসব ভাতাও দেয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভূক্তি (মানথ্লি পেমেন্ট অর্ডার) না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডিভাইন গ্রুপের কর্ণধার প্রচারণা বিমুখ হাসানুজ্জামান রাহীন।

হিজলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সাহাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘২০০২ সালে একটি বেসরকারী কোম্পানীর চাকুরি ছেড়ে এলাকায় স্কুল করি। বর্তমানে প্রায় পাঁচশত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে আমার প্রতিষ্ঠানে। এখনো এমপিওভূক্ত না হওয়ায় আমার স্কুল বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়। ডিভাইন গ্রুপ কিছুটা হলেও সম্মানী দেয়ায় একটু স্বস্তি বোধ করছি।’

আরো পড়ুন: নীতিমালা না মেনে এমপিওভুক্তি চলছেই

জিসিবি আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর বলেন ২০০৩ সালে কলেজ করেছি। শিক্ষকগণ এখন পর্যন্ত কোন বেতন কড়ি পায় না। কয়েক বছর হলো ডিভাইন গ্রুপ আমাদের বেতন দেয়। এতে কিছুটা হলেও শিক্ষকদের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার সুযোগ হয়েছে। এই বেতন না পেলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেত।

জানতে চাইলে ডিভাইন এডুকেশনের ম্যানেজার শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, এলাকার শিক্ষা বিস্তারের জন্য ডিভাইন গ্রুপ শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে। তাছাড়া ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রোধ, বিদ্যমান শিক্ষকদের সহায়তা করা, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা আমাদের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। আমাদের এমডি স্যার ঘোষণা দিয়েছেন এসকল শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের বেতন-ভাতা চালিয়ে যাব।

চৌগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেন, এটি একটি উৎসাহব্যাঞ্জক দিক। ভালো উদ্দ্যোগ। আমাদের এমন প্রতিষ্ঠানও আছে যেখানে ১৬ বছর ধরে পাঠদান করা হয়। তাদের একাডেমিক রেজাল্টও অনেক ভাল। এভাবে স্থানীয় বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত এগিয়ে যাবে। আমি এটাকে ওয়েলকাম করি।

আরো পড়ুন: এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে স্থবিরতা ও অস্বচ্ছতা কাম্য নহে

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত